একনজরে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ
জিতু মিয়ার বাড়ী
চাদঁনী ঘাটের সিড়িঁ/ আলী আমজাদের ঘড়ি/ বন্ধু বাবুর দাড়ি/ আর জিতু মিয়ার বাড়ি সিলেটের পরিচিতিতে বহুল প্রচলিত এমন লোকগাঁথা। সিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীর বাজারের দক্ষিণ সড়কের ধারে ১ দশমিক ৩৬৫ একর ভুমি জুড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জিতু মিয়ার বাড়ি। চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত মুসলিম স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন এ দালানটি নির্মাণ খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া। ১৯৯১ সালে এ বাড়ির সামনের দালানটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমান কাজিরবাজার গরুর হাট ছিল কাজিদের মূল বাড়ি। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে বাড়িটি লন্ডভন্ড হয়ে গেলে বর্তমানে জায়গায় বাড়িটি স্থানান্তরিত হয়। খাঁন বাহাদুর জিতু মিয়ার প্রথম স্ত্রী ছিলেন তার চাচা মাওলানা আব্দুল রহমানের মেয়ে সারা খাতুন। সারা খাতুনের অকাল মৃত্যুতে ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা রসুল বক্সের মেয়েকে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ স্ত্রীও অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ঘরে কোনো সন্তান সন্তনি ছিল না। তবে পরবর্তীতে জিতু মিয়ার ৫টি বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়।
সে সব স্ত্রীর ঘরে তার বহু সন্তান সন্ততি রয়েছে। কিন্তু দুরদর্শী জিতু মিয়া তার জমিদারি ও বিশেষ করে আলীশান বাড়িটির অস্তিত্ব চিরদিন অক্ষত রাখান লক্ষ্যে মৃত্যুর আগে ১৯২৪ সালে নিজেকে নিঃসন্তান উল্লেখ করে তৎকালীন আসাম সরকারের অনুমোদন নিয়ে তারঁ যাবতীয় সম্পত্তি ওয়াকফ করেন। কে বি এহিয়া ওয়াকফ এস্টেট নামে এস্টেট এর মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। পরবর্তীতে সিলেট বিভাগে উন্নীত হলে বিভাগীয় কমিশনার পদাধিকার বলে এ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন।
ইতিহাস ঘেটে জানা গেছে, মৌলভী আবু নছর মোহাম্মদ ইদ্রিছ কাজী হয়ে সিলেট আসেন নবাবী আমলে। সুরমা নদীর তীরে তারঁ বিচারালয়কে কেন্দ্র করে তৎকালীন সময়ে গড়ে উঠে একটি গঞ্জ। লোকজন একে খানবাহাদুর গঞ্জ বাজার বলে ডাকতো। তার মৃত্যু পর তার পুত্র মাওলানা আবু মোহাম্মদ আবদুর কাদির ও মাওলানা আবুল হোসাইন মোহাম্মদ আব্দুর রহমান তাদের বিশাল জায়গীরকে কেন্দ্র করে জমিদারি এস্টেট গড়ে তোলেন।
ক্বীনব্রীজ
সিলেট নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ক্বীন ব্রীজের নামটি বেশ গর্বের সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। সিলেটের প্রবেশদ্বার সিলেটের কীন ব্রীজ । সুরমা নদীর ওপর স্থির দাঁড়িয়ে এই ব্রীজ পথচারীদের জানান দেয় যুগ যুগান্তরের নানা রঙের ইতিহাসের। দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকার পর এ অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শনটি সাম্প্রতিক কালে সংস্কার করা হয়েছে ফলে আরো রঙে ,আরো সাজে সেজেছে ক্বীন ব্রীজ।
ইতিহাস থেকে ব্রীজটি সম্পর্কে নানা কথা জানা গেছে। গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি তখন সিলেট সফরে আসেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময় আসামের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। সঙ্গত কারণেই সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় । ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামে। ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী। এর আকৃতি ধনুকের ছিলার মত বাঁকানো। ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ১১৫০ ফুট। প্রস্থ ১৮ ফুট। ব্রীজ নির্মাণে তখনকার দিনেই ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, তৎকালীন আসাম সরকারের এক্সিকিউটিভ সদস্য রায় বাহাদুর প্রমোদ চন্দ্র দত্ত এবং শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামিদ ব্রীজটি নির্মাণের ক্ষেত্রে অশেষ অবদান রাখেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে বিধ্বস্ত অংশটি মেরামত করা হয়। পরবর্তীতে তা হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রীজের বিধ্বস্ত অংশ কংক্রীট দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়। তৎকালীন নৌ বাহিনীর প্রধান রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান সংস্কারকৃত ব্রীজটি উদ্বোধন করেন।
ব্রীজটি এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটক ভিড় জমান।
সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্বীনব্রীজ ।
আলী আমজাদের ঘড়ি
ঐতিহাসিক তথ্য মতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিম পাশার জমিদার আলী আমজাদ ১৮৭৪ সালে সিলেট জেলার সুরমা নদীর তীরবর্তী স্থানে এই অনন্য সুন্দর স্থাপনাটি তৈরী করেন। তাঁর নাম অনুসারে এটিকে আলী আমজাদ এর ঘড়ি হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৮৭৪ সালে সিলেট জেলা আসাম প্রদেশের সাথে একত্রীভুক্ত হয়। তখন এই নিয়ে সিলেটে তীব্র প্রতিবাদ হয়। সিলেটের জনগণকে শান্ত করার জন্য তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থ ব্রম্নক সিলেট সফর করেন এবং বড়লাটের সফর উপলক্ষে এবং স্থানীয় জনসাধারণের সুবিধার্থে জমিদার আলী আমজাদের নিজ তহবিল হতে এই ঘড়িটি নির্মাণ করা হয়।
প্রায় ১৪০ বছর যাবৎ উক্তটি ঘড়িটি আলী আমজাদের স্মৃতি বহন করে আসছে। সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের উদ্যোগে ঘড়িটি আধুনিকায়ন ও মেরামত করা হয়। এটি সিলেট জেলার একটি অন্যতম পর্যটন আকষর্ণীয় স্থান। দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটক এই ঘড়িটি একনজরে দেখার জন্য প্রতিনিয়ত ভিড় জমায়।
অবস্থান:সিলেট সার্কিট হাউজ ও ক্বিন ব্রিজ সংলগ্ন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:সিলেট রেলওয়ে স্টেশন অথবা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে গেলেই ঐতিহাসিক আলী আমজাদ ঘড়িটির অবস্থান।
ঘড়িঘরের পরিমাপ:দৈর্ঘ্য: ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি ; প্রস্থ: ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি; নীচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা: ১৩ ফুট; ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা: ৭ ফুট ; ঘড়ির উপরের অংশের উচ্চতা : ৬ ফুট ; মোট উচ্চতা : ২৬ ফুট।
মনিপুরী রাজবাড়ী
মনিপুরী সিলেট তথা বাংলাদেশের আদি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনগোষ্ঠি। নগর সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মনিপুরী রাজবাড়ী প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। এ ভবনের নির্মাণ শৈলী সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এককালের প্রভাবশালী রাজা গম্ভীর সিং এর স্মৃতিধন্য এ বাড়িটি আজ অবহেলিত ও বিলীন প্রায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রকৃত ভবন হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। বাড়ীর সুপ্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মনীপুরী রাজবাড়ীর স্মৃতি সম্বল। এখনও ধ্বংস স্ত্তপের মতো টিকে থাকা স্থাপনাটি এ বাড়ীসহ সিলেটে বসবাসরত মনিপুরী সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির স্থান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীতে সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালে রাজবাড়ীটি স্থাপিত হয়। তৎকালীন মনিপুরী রাজ্যের তিন সহোদর রাজা চৌর্জিৎ সিং, মার্জিত সিং ও গম্ভীর সিং রাজবাড়ীটি তৈরী করে এখানে বসবাস করেন। পরে চৌর্জিৎ সিং ও মার্জিত সিং কমলগঞ্জের ভানুগাছ এলাকায় বসতী স্থাপন করলেওরাজা গম্ভীর সিং থেকে যান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। ১৮২৬ সালে বৃটিশ সরকারের সহযোগিতায় বার্মার সাথে যুদ্ধ করে মনিপুর রাজ্য পুরুদ্ধারের আগ পর্যন্ত রাজা গম্ভীর সিং সপরিবারে এখানেই অবস্থান করেন। ইতিহাসে মনিপুরীদের কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয় ১৮১৯-১৮২৬ সাল পর্যন্ত । ১৮২২ সালে মনিপুরী রাজ্যের সাথে বার্মার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। অসংখ্য মনিপুরী পরিবার নিজ আবাসভূমি ছেড়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজা চৌর্জিৎ সিংও কাছাড়ে পালিয়ে যান। রাজ্যভার গ্রহণ করেন তার সহোদর মার্জিত সিং। এক পর্যায়ে মার্জিত সিং বার্মিজদের কাছে পরাস্থ হন। পরিশেষে চৌর্জিৎ , মার্জিত ও গম্ভীর তিন ভাই একত্রে পুনরায় চলে আসেন মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। তৎকালীন বৃটিশ উপনিবেশ শাসকদের আশ্রয়ে এখানেই বসতী স্থাপন করেন। বৃটিশ সরকারের অনুরোধে সিলেটে সশস্ত্র খাসিয়াদের দমনে মনিপুরী লেভী (সৈন্যবাহিনী) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদিকে, সিলেটে দীর্ঘদিন অবস্থানের সুবাদে মনিপুরিদের সাংস্কৃতিক সম্ভারের নানা দিক এ অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যা এখনো প্রতীয়মান হয় মনিপুরী নৃত্য, গান ও পোষাক ছাড়াও সিলেটের কৃষ্টি সংস্কৃতিতে।
মনিপুরী সম্প্রদায়ের ইতিহাস-আবেগ-অনুভূতির অন্যতম স্থান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীর সংস্কারের জন্য আজ অবধি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। রাজা কতৃক নির্মিত প্রাসাদের তিন চতুর্থাংশের কোন অস্তিত্ব নেই। উপরন্তু রাজবাড়ীর সামনে অপরিকল্পিত ভাবে মন্দির নির্মান করে রাজবাড়ীর পুরাকীর্তি ঢেকে রাখা হয়েছে।
বর্তমানে মনিপুরী ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকজন বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন এ রাজবাড়ীতে। পূর্বসুরী রাজার রেখে যাওয়া নানা বস্ত্তকে স্বর্ণালী স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে আছে পরিবারগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একমণ ওজনের মন্দিরের একটি ঘন্টা যার গায়ে মনিপুরী ভাষায় লেখা আছে,‘‘শ্রীহট্ট কুনোঙ্গী শ্রী মহাপ্রভুদা শ্রীলশ্রী পঞ্চযুক্ত মনিপুরে স্বরচন্দ কীর্ত্তি সিংহ মহারাজন্য কৎখিবী সরিকনি ইতিশকাব্দা ১৮০০ তারিখ ১৮ জৈষ্ঠ্য’’।
মনিপুরী সংস্কৃতি সিলেটের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যেরই অংশ । দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষার্থে এই সুপ্রাচীন, ঐতিহাসিক রাজবাড়ির সংস্কার ও পুরাকীর্ত্তির সংরক্ষনে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।
মিউজিয়াম অব রাজাস
মরমী কবি হাছন রাজা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেও স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিলেট নগরীর প্রানকেন্দ্র জিন্দাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে একটি যাদুঘর। এর নাম দেওয়া হয়েছে মিউজিয়াম অব রাজাস’। এখানে দেশ বিদেশের দর্শনার্থীরা হাছন রাজা ও তার পরিবার সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে প্রতিদিন ভিড় করছেন।
মিউজিয়ামে দেওয়ান হাছন রাজা ও দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরীর মূল্যবান ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও গানের পান্ডুলিপি শোভা পাচ্ছে। প্রবেশদ্বারে রয়েছে হাছন রাজার বাড়ির ধ্বংসাবশেষের একটি পিলার। মিউজিয়ামটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে-পবিত্র কোরআন শরীফের ছোট আকারের একটি কপি। কোরআন শরীফটির সাইজ হচ্ছে-পৌণে এক ইঞ্চি বাই এক ইঞ্চি। এখানে শোভা পাচ্ছে-হাছন রাজার ঘোড়ার বেল্ট, তাঁর জন্মস্থান ও জমিদারী এলাকা থেকে সংগৃহীত ইট, রাজার পোষা কুড়া পাখি ও হাতির নামের তালিকা, তার ব্যবহৃত শ্বেত পাথর ও রুপার তৈজস পত্র, হাছন রাজার ওপর নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়া ছবিতে ব্যবহৃত পোষাক ও ছবির সিডি, তার স্ত্রীর ব্যবহার্য জিনিসপত্র, দেওয়ান একলিমুর রাজার ব্যবহৃত চেয়ার, তার স্ত্রীর ব্যবহার্য সোনার তারের ও রুপার তারের তৈরী পোষাক, তার ব্যবহৃত হিসাবের খাতা, বৃটিশ সরকার প্রদত্ত খান বাহাদুর মেডেল এবং দেওয়ান তাছাড়া রাজা সংগৃহিত হাছন রাজার গানের পান্ডুলিপি।
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মন্ত্রীদের কাছে দেওয়ান তালেবুর রাজার লেখা চিঠি, তার ব্যবহৃত ঘড়ি, কলম, আংটি, লাইসেন্স, দেওয়ান তওয়াবুর রাজা চৌধুরীর ব্যবহৃত ছুরি, দেওয়ান ছয়ফুর রাজা চৌধুরী সংগৃহীত হাঙ্গরের দাঁতও যাদুঘরে স্থান পেয়েছে। হাছন রাজার বংশধরদের চার্টও মিউজিয়াম সংগৃহীত আছে।
দেওয়ান হাছন রাজা বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জে ১২৬৯ সালের ৭ পৌষ (১৮৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসে) জন্মগ্রহণ করেন। হাছন রাজার গান বাংলা লোক সঙ্গীতের অমূল্য সম্পদ। মূলত সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক উপভাষায় রচিত তার গান। তবু বাণী বৈচিত্রে ও সুর মাধুর্যে এ গান অঞ্চল নির্বিশেষে বাংলাভাষী সকল জনগোষ্ঠীর হৃদয় জয় করেছে। অর্জন করেছে বিপুল জনপ্রিয়তা। কেবল জনপ্রিয়তাই নয়, ভাবের গভীরতা ও উৎকর্ষের বিচারে হাছন রাজার গান কালজয়ী সাহিত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৩২৯ সালের ২১ অগ্রহায়ণ(৭ ডিসেম্বর,১৯২২) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মালনীছড়া চা বাগান
সিলেট তথা বাংলাদেশের প্রথম চা-বাগান মালনীছড়ার গোড়াপত্তন হয় ১৮৫৪ সালে। সিলেট শহরের অতি নিকটের এই চা-বাগান বৈষয়িক কোলাহলে তার শ্রী ইতোমধ্যে অনেকটা হারিয়েছে। তারপরও ভ্রমণের জন্য এক অভূতপূর্ব স্থান।
সিলেট শাহী ঈদগাহ
স্থানটি নানা কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এখানেই হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থান হয়েছে। ভারতের অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্না গান্ধী থেকে শুরু করে কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের মতো নেতাদের পাদস্পর্শে ধন্য স্থানটি। অতীতে সিলেটের বড় বড় সমাবেশের স্থানও ছিল এটি। আর প্রতি বছর ঈদ জামায়াতে লোক সমাগমের বিষয়টি তো বলাই বাহুল্য।
স্থানটি হচ্ছে- সিলেটের শাহী ঈদগাহ। দেশের প্রাচীনতম ঈদগাহ এটি। মনোমুগ্ধকর কারুকার্যময় এই ঈদগাহটি মোগল ফৌজদার ফরহাদ খাঁ নির্মাণ করেন। এখানে এক সাথে প্রায় দেড় লাখ মুসল্লী ঈদের জামাত আদায় করতে পারেন। ঈদগাহর প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোরম। নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় এর অবস্থান। তাই ঈদগাহটির এমন নামকরণ হয়েছে। ঈদগাহের উত্তরে শাহী ঈদগাহ মসজিদ, পাশে সুউচ্চ টিলার ওপর বন কর্মকর্তার বাংলো, দক্ষিণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট কেন্দ্র, পূর্ব দিকে হযরত শাহজালাল(র:) এর অন্যতম সফরসঙ্গী শাহ মিরারজী (র:) এর মাজারের পাশের টিলার ওপর রয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।
অনুপম কারুকার্যখচিত এই ঈদগাহের মূল ভূ-খন্ডে ২২টি সিঁড়ি মাড়িয়ে উপরে উঠতে হয়। এরপরই ১৫টি গম্বুজ সজ্জিত ঈদগাহ। সীমানা প্রাচীরের চারদিকে রয়েছে-ছোট বড় ১০টি গেইট। ঈদগাহের সামনে অজুর জন্য বিশাল পুকুর অবস্থিত।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৭৮২ খ্রীষ্টাব্দে এখানে সৈয়দ মোহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মোহাম্মদ মেহেদী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী অভ্যূত্থান সংঘটিত হয়। ইংরেজদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় শহীদ হন।
প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে এখানে বিশাল দুটি ঈদ জামাত অনুষ্টিত হয়। এখানে এক সাথে লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদ জামাত আদায় করতে পারেন।
বেত শিল্প
মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সিলেটের বেত শিল্প অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কয়েক বছর আগে যেখানে হাতে গোনা কয়েকটি বেতের আসবাপত্রের দোকান ছিল সেখানে এখন দোকান রয়েছে প্রায় শতাধিক। এ পেশার সাথে যুক্ত আছে সহস্রাধিক শ্রমিক। বর্তমানে বাংলাদেশের বেতের আসবাপত্রের চাহিদার সিংহভাগ যোগান দেয় সিলেটের বেত শিল্প । অভ্যন্তরিন চাহিদা পূরন করে বর্তমানে সিলেটের বেত সামগ্রী আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
প্রায় ২০ বছর পূর্বে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন(বিসিক) এর উদ্যোগে সিলেটে নগরীর ঘাসিটুলা এলাকায় একটি বেতশিল্প গড়ে তোলা হয়। কিছুদিন পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়।বর্তমানে অনেকেই ব্যাক্তিগত উদ্যোগে এই শিল্পের প্রসারে ভূমিকা রাখছে।
সিলেট এক সময় বেতের জন্য বিখ্যাত ছিল। সিলেটে ১৮৮৫ সালে প্রথম বেতের ফার্নিচার ম্যানুফেকচার হয়। ১৯২৬ সাল পর্যন্ত সিলেটের বনাঞ্চলে প্রচুর বেত পাওয়া যেত। যদিও পরবর্তীতে সিলেটে অঞ্চলে বেতের উৎপাদন কমে আসতে থাকে। বর্তমানে উৎপাদিত বেতে চাহিদা পূরন না হওয়ায় বিদেশ থেকেও বেত আমদানি করা হচ্ছে।
সিলেটে বর্তমানে প্রায় ৫০ প্রকারের বেত জাতীয় পণ্য তৈরী হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বেতের তৈরী ম্যাগাজিন র্যাক, টেলিফোন চেয়ার, সোফা সেট, বেড সেট, স্যুজ রেক, ট্রলি, টেবিল, শেলফ, রিডিং টেবিল, রকিং চেয়ার, টেলিফোন টেবিল, ফোল্ডিং চেয়ার, আর্ম চেয়ার, রাউন্ড কফি টেবিল, কর্ণার সোফা এন্ড ইজি চেয়ার, ফুল ইজি চেয়ার, ডাইনিং সেট, টি ট্রলি, গার্ডেন চেয়ার, পেপার বাস্কেট, বুক শেলফ, ম্যাগাজিন বাস্কেট, ডাইনিং চেয়ার,বাঙ্গি টেবিল,কোর্ট হ্যাঙ্গার,মোড়া,রকিং চেয়ার, বেবী কট, বোতল র্যাক ও প্ল্যান্টার। এর বেশীর ভাগই ইংল্যান্ডে রপ্তানী করা হয়। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় এই বেত সামগ্রী।
ওসমানী যাদুঘর
ওসমানী জাদুঘর হচ্ছে বাংলাদেশের সিলেট জেলার কোতোয়ালী থানায় অবস্থিত একটি জাদুঘর। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (১২ এপ্রিল ১৯৭১– ৭ এপ্রিল ১৯৭২) বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর পৈতৃক নিবাস থেকে পরিবর্তন করে বর্তমান “ওসমানী জাদুঘরে” স্থানান্তর করা হয়। এটি বাংলাদেশের সুপরিচিত সিলেট বিভাগেরপ্রাণ কেন্দ্র (ধোপা দিঘীর পাড়) সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত।
সিলেট সার্কিট হাউস
সর্বপ্রথম ১৯৫৪ সালে সার্কিট হাউস কটেজ নির্মাণ করা হয় । পরবর্তীতে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম সাইফুর রহমান ২৪ জানুয়ারি ২০০৫ খ্রিঃ ( ১১ মাঘ ১৪০৯ বঙ্গাব্দ ) ভি ভি আই পি সার্কিট হাউসের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮খ্রিঃ ( ১৯ ভাদ্র ১৪১২ বঙ্গাব্দ) তারিখে ভি ভি আই পি সার্কিট হাউজ এর শুভ উদ্বোধন করেন । সিলেট শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর উত্তর তীরে, বিখ্যাত ক্বীন ব্রীজের ডান পার্শ্বে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে ১.৮৭ একর জায়গার উপর ২ টি সুরম্য ভবন নিয়ে সিলেট সার্কিট হাউজ অবস্থিত ।
নতুন ভবনঃ ভি ভি আই পি সার্কিট হাউজ ভবন
মোট কক্ষ সংখ্যাঃ ১৩ টি ।
(ক) ভি ভি আই পি স্যুট- ০৩ টি ( এ সি)
১। ভি ভি আই পি স্যুট কক্ষ নং- ২০১, ৩০১, ৩০২
(খ) ভি ভি আই পি এসোসিয়েট কক্ষ – ০১ টি ( এ সি) কক্ষ নং- ২০৪
(গ) ভি ভি আই পি ডাইনিং রুম -০১ টি ( এ সি) কক্ষ নং- ২০৩
(ঘ) ভি আই পি কক্ষ – ০৮ টি ( এ সি) ডাবল বেড-৩ টি, সিঙ্গেল বেড- ৫ টি ।
১। ভি আই পি কক্ষ নং- ২০৫, ২০৬, ২০৭ , ২০৮
Powered by Froala Editor